Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব

মোহাম্মদ আতাউল করিম (জন্ম: ৪ মে১৯৫৩বাংলাদেশী-মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার নরফোকে অবস্থিত ওল্ড ডোমিনিয়ন ইউনিভার্সিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট (গবেষণা) হিসেবে কর্মরত এই বিজ্ঞানী ইলেক্টো-অপটিক্সের গবেষণায় অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে গণ্য

জন্ম ও বংশ পরিচয়

বাংলাদেশের মৌলভীবাজারের বড়লেখার মিশন হাউজে জন্মগ্রহণ করেন আতাউল করিম। বাবা মোহাম্মদ আবদুস শুকুর[১] পেশায় ডাক্তার ছিলেন।

শিক্ষাজীবন

তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় বড়লেখার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, অত:পর বড়লেখার বিখ্যাত পিসি হাই স্কুলে পড়ালেখা করেন। পরবর্তিতে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ থেকে ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে মাধ্যমিক পরীক্ষায় চট্টগ্রাম বোর্ডে প্রথম শ্রেণীতে ৪র্থ স্থান অধিকার করেন। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সিলেট এমসি কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে পদার্থবিজ্ঞানে বি.এসসি. (অনার্স) ডিগ্রী লাভের পর উচ্চ শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন।[১] পদার্থবিজ্ঞানে মাস্টার অফ সায়েন্স, ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ মাস্টার অফ সায়েন্স এবং পিএইচডি করেন ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা থেকে, যথাক্রমে ১৯৭৮১৯৭৯ এবং ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে। [২]

কর্মজীবন

পড়ালেখা শেষ করে তিনি আরকানস বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে উইচিটা স্টেট ইউনিভার্সিটিত্র তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সেখানে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইউনিভার্সিটি অফ ডেইটনে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৮ সালে তিনি সহযোগী অধ্যাপক এবং ১৯৯৩ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ডেইটন বিশ্ববিদ্যালয়েই তিনি ইলেক্ট্রো-অপটিক্স প্রোগ্রামের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯১ থেকে ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সেখানে তড়িৎ ও কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে ওহিও'র রাইট প্যাটার্সন বিমান ঘাঁটিতে এভিওনিক্স পরিচালক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত সেখানে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি টেনেসী বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং ২০০০ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। ২০০০ সালে তিনি সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্কে তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলের ডীন হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। ২০০৪ সালে তিনি নরফোকে অবস্থিত ওল্ড ডোমিনিয়ন ইউনিভার্সিটির তড়িৎ ও কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং বর্তমানে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট (গবেষণা) হিসেবে কর্মরত। 

গবেষণা সহায়তা

তার গবেষণার ব্যাপক অগ্রগতির কারণে অর্থ ব্যয় করছে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগ, রাইট প্যাটার্সন ল্যাবরেটরি, অপটিক্যাল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েটস, মার্কিন সেনাবাহিনী, ন্যাভাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি প্রভৃতি প্রথম সারির সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো।

প্যাটেন্ট

তাঁর দুটো আবিষ্কারের প্যাটেন্ট রয়েছে[১]:

  • ফাইবার অপটিক কাপলিং সিস্টেম (১৯৮৯)
  • ট্রাইনারি অ্যাসোসিয়েটিভ মেমোরি (১৯৯৩)

তত্ত্বাবধান

তাঁর অধীনে ৫৭ জনেরও অধিক শিক্ষার্থী মাস্টার্স ও ডক্টরেট পর্যায়ে গবেষণা প্রতিবেদন রচনা করেছেন।[৩]

সদস্য

লেখালেখি

করিম ছাত্র থাকাকালীন সময়ে লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৭২-১৯৭৬ পর্যন্ত বিজ্ঞান সাময়িকী ও বাংলা একাডেমী বিজ্ঞান পত্রিকায় তার ত্রিশটিরও বেশি লেখা প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞান সাময়িকীতে তার প্রকাশিত লেখাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিবর্তন কাহিনী এবং সাম্প্রতিক। তিনি বাংলা একাডেমীতে একটি বইয়ের পান্ডুলিপিও জমা দিয়েছিলেন, কিন্তু বইটি প্রকাশিত হয়নি। উচ্চতর শিক্ষার জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর সাথে বাংলায় তার লেখালেখিরও সমাপ্তি ঘটে।

প্রকাশনা

তিনি ১৮টি বই রচনা করেছেন। এছাড়া আরো ৭টি বইয়ে তিনি ‘অধ্যায়’ লিখেছেন। তাঁর বৈজ্ঞানিক নিবন্ধের সংখ্যা ৩৭৫-এরও বেশি। তাঁর নিবন্ধগুলো পৃথিবীর খ্যাতনামা জার্নালসমূহে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর রচিত ও সম্পাদিত বইগুলো বিভিন্ন দেশে পাঠ্যপুস্তক হিসেবে পড়ানো হয়। তার বইগুলোর মধ্যে Digital Design: A Pragmatic Approach (1987), Electro-Optical Devices and Systems (1990), Optical Computing: An Introduction (1992), Electro-Optical Displays (1992), Continuous Signals and Systems with Matlab (2001, 2009), and Digital Design: Basic Concepts and Principles (2008) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

বই

  1. IASTED Technology Conferences 2010, Acta Press, November 2010. (With K. Lee, H. Ling, D. Maroudas, and T. Sobh).
  2. Technological Developments in Networking, Education and Automation, Springer, The Netherlands, August 2010 (With A. Mahmood, T. Sobh, V. Kapila, M. Iskander, and M. Elleithy).
  3. Technological Developments in Education and Automation, Springer, The Netherlands, 2010. (With M. Iskander, and V. Kapila).
  4. Projeto Digital: Conceitos e Principios Basicos (in Portuguese), LTC-Livros Tecnicos e Cientificos Editora S.A., Rio de Janerio, Brazil, 2009. (With Xinghao Chen)
  5. Novel Algorithms and Techniques in Telecommunications, Automation and Industrial Electronics, Springer, The Netherlands, 2008. (with T. Sobh, K. Elleithy, and A. Mahmood).
  6. Continuous Signals and Systems with MATLAB 2nd Edition, CRC Press – Taylor & Francis Group, Florida, January 2008. (With T. El-Ali).
  7. Digital Design: Basic Concepts and Principles, CRC Press – Taylor & Francis Group, November 2007. (with Xinghao Chen)
  8. Innovative Algorithms and Techniques in Automation, Industrial Electronics and Telecommunications, Springer, The Netherlands, 2007. (With T. Sobh, K. Elleithy, and A. Mahmood.
  9. Advances in Computer, Information, and Systems Sciences and Engineering, Springer, The Netherlands, 2006. (With K. Elleithy, T. Sobh, A. Mahmood and M. Iskander.
  10. Continuous Signals and Systems with MATLAB, CRC Press, Florida, 2001. (With T. El-Ali)
  11. Solutions Manual – Continuous Signals and Systems with MATLAB, CRC Press, Florida, March 2001. (With T. El-Ali, and Y. Tian).
  12. Optical Computing: An Introduction, John Wiley & Sons, New York, 1992. (With A.A.S. Awwal).
  13. Electro-Optical Displays, Marcel Dekker, New York, 1992.
  14. Electro-Optical Devices and Systems, PWS KENT Publishing Co, Boston, Mass, 1990.
  15. Solution Manual Accompanying Electro-Optical Devices & Systems, PWS Kent Pub. Co., Boston, Mass, 1990.
  16. Digital Design: A Pragmatic Approach, PWS KENT Publishers, Boston, Mass, 1987. (With E.L. Johnson).
  17. Solution Manual Digital Design: A Pragmatic Approach, PWS Kent Publishers, Boston, Mass, 1987. (With E.L. Johnson)

পুরস্কার ও সম্মাননা

মোহাম্মদ আতাউল করিম যেসকল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য:[১]

  • এনসিআর স্টেকহোল্ডার অ্যাওয়ার্ড (১৯৮৯)
  • নাসা টেক ব্রিফ অ্যাওয়ার্ড (১৯৯০)
  • আউটস্ট্যান্ডিং সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড (১৯৯৪)
  • আউটস্ট্যান্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড (১৯৯৮)

এছাড়াও তার সম্মানার্থে তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বিভিন্ন তালিকায়:

  • ২০০০ আউটস্ট্যান্ডিং সায়েন্টস্ট অফ দি টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরী
  • আমেরিকান ম্যান এ্যান্ড উইম্যানস ইন দি সায়েন্স

অবদান

বাংলাদেশের জন্য তার সবচেয়ে বড় অবদান ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন কম্পিউটার এন্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি আয়োজন। এই সম্মেলনটি বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে পরিণত হয়েছে। [৫][৬] ড. করিম এই সম্মেলনের ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রাম কমিটির চেয়ারম্যান। এই কমিটির ৮৫ সদস্য বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ। সম্মেলনে প্রকাশিতব্য বৈগানিক নিবন্ধসমূহ কমিটির সদস্যবৃন্দ পর্যালোচনা করেন। এই সম্মেলনের ফলে বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা তাদের কাজ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরতে পারছেন।

পারিবারিক জীবন

ড. করিম ১৯৭৭ সালে সহপাঠী সেতারাকে বিয়ে করেন। সেতারা একজন প্রাণরসায়নবিদ। তিনি এক পুত্র ও দুই কন্যার জনক।[৭]

তথ্যসূত্র

  1.  
  • "বাঙালি গবেষক ড. আতাউল করিম", বাংলাদেশের সেরা বিজ্ঞানী, হিটলার এ. হালিম; শিকড়, বাংলাবাজার ঢাকা থেকে প্রকাশিত। প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০০৪ খ্রিস্টাব্দ। পরিদর্শনের তারিখ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১১ খ্রিস্টাব্দ।
  • আপডেট করেছেন: Md Afjalur Rahman